রহস্যময় ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’ নিয়ে – মুন আর ক্যামেলিয়া | সঙ্গীত
জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘ঈগলস’এর সবচেয়ে জনপ্রিয় গান নিঃসন্দেহে “হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া”। এর লিড ভোকাল ডন হেনলি , লিড গিটারিষ্ট ডন ফেল্ডার আর গ্লেন ফ্রের (অ্যাকুষ্টিক ও ইলেকট্রিক গিটার, ব্যাকিং ভোকাল)। ছয় মিনিট আট সেকেন্ডের রক জেনারের এই গান রিলিজ হয় ১৯৭৭ সালে, অ্যালবামের টাইটেল ট্র্যাক । গানটার প্রাথমিক ডেমোর নাম দেয়া হয়েছিল 'Mexican Reggae' । গানের আইডিয়াটা সম্ভবত জেথ্রু টুল এর ‘উই ইউসড টু নো’ গানটা থেকে ঈগলসদের মাঝে আসে । গিটার সলো আর লিরিক দুটোই সুর আর শব্দের অদ্ভুত রসায়ন!
অ্যালবামের কভারে যে হোটেলটির ছবি ছাপা হয়, সেটি আসলে লস অ্যাঞ্জেলেসের বেভারলি হিলস্ হোটেল, যেটি পিঙ্ক প্যালেস নামেও পরিচিত । হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া বলে আদতে কোন হোটেল নেই । গানটা সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের এক্সপ্লানেশন আছে । এর ইলাবোরেশনে এলেসডি, হিরোইন বা কোকেন অ্যাডিকশন কিংবা সাটানিজম কথা বলেছে ।
মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি, মেনটাল হসপিটাল, গনিকালয় (Ceiling Mirrors কিংবা লাইব্রেরি এর কথাও এসেছে । এখানে ততকালীন মিউজিক ইন্ডাষ্ট্রিতে প্রচলিত প্রেমার্ত প্রেয়োবাদ বা ভোগবাদ, লোভ-লিপ্সা, সংস্কৃতির অতিরঞ্জন আর আত্মবিনাশ এইসব রুপকের আড়ালে ফুটে উঠেছে ।
ব্যান্ডদল: ঈগলস |
লিরিক্সে শিরোনামটাকে একটা বিলাসবহুল ও জাঁকালো রিসর্ট হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে “you can check out anytime you like, but you can never leave."
গানটি শুরু হচ্ছে এভাবে:
“On a dark desert highway
Cool wind in my hair
Warm smell of colitas
Rising up through the air”
“On a dark desert highway
Cool wind in my hair
Warm smell of colitas
Rising up through the air”
গানে ‘colitas’-এর উষ্ণ সুবাসের কথা আছে। এই স্পেনিশ টার্ম colitas (উচ্চারন koe-LIE-tis)। এর অর্থ ‘little tails’ যা মারিজুয়ানার মুকুলকে বুঝায় । তবে ইগলস এখানে ডিরেক্ট মারিজুয়ানা স্টিককেই বুঝিয়েছে, বুঝিয়েছে এর সৌরভকে । হাত বাড়ালেই মারিজুয়ানা, কোকেইন পাওয়া যায় ক্যালিফোর্নিয়ায়, এতটাই সহজলভ্য ।
আঁধার রাতের কোন বিজন রাজপথের কথা বলা হয়েছে এখানে। উত্তর-পশ্চিম মেক্সিকোর বেজা ক্যালিফোর্নিয়া নামক একটা পেনিন্সুলা বা বাইল্যান্ডে হতে পারে সেই স্থান । এই স্থানকে লিরিসিষ্টের কাছে মরুভুমির পাশে মরূদ্যান মনে হয়েছিল। গাড়িতে ছাদ নেই, খোলা আকাশ দেখা যাচ্ছে, ঝিরঝির বাতাস বইছে। এই অবস্থায় গাড়ি চালক মারিজুয়ানার স্টিক টানছিল। বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে সেই ধোঁয়া: ‘my head grow heavy and my sight grow dimm’- মারিজুয়ানার ইফেক্ট ।
ক্যালিফোর্নিয়া আমেরিকানদের স্বপ্নের রাজ্য ‘Such a lovely place’ । রাজ্যের কলমায় স্বর্ণখনির উপস্থিতি থেকে ক্যালিফোর্নিয়া হয়ে Gold Rush এর শহর। অভাবনীয় বানিজ্যিক উত্তরনের হাওয়া লাগে লস এঞ্জেলেসের হলিউডে "Such a lovely face" । এখানে সবাই বুঁদ টাকার ঘোরে, নারীর লোভে, খ্যাতির মোহে—মানবীয় গুনাবলী অবলুপ্ত প্রায় । পপুলার কালচারে তাই ক্যালিফোর্নিয়া একটি হৃদয়হীন ফাঁদ — নন্দিত নরক ।
গানে বস্তুবাদকে ‘shimmering light’ (কম্পমান আলো) আর ‘She’-এর রুপকে উপস্থাপন করা হয়েছে । জীবিকা আর খ্যাতির সন্ধানে আসা অনেক মানুষের কাছে স্বপ্নগুলো মরীচিকাই থেকে যায় । তবে একবার এই লাল আলোর শহুরে জীবনে চলে এলে আর ফিরে যাওয়া নেই "we are programmed to receive”।
ভ্রমনকারী হোটেল ক্যালিফোর্নিয়ায় পৌঁছে গেলে- একজন রহস্যনারী সিডিউসিভ স্বরে তাকে অভ্যার্থনা জানায়, প্রলুব্ধ করে। গানের মুল চরিত্র হলো এই রহস্যনারী, ভ্রমনলণকারী হলো গল্পকথক । রহস্যনারীর বাঁকা চাহনি আর তীক্ষ্ণ চোখের চাবুক ভ্রমনকারীর লোহিতকণায় সৃষ্টি করে আন্দোলন ।
হোটেলে তখন শুরু হয়ে গেছে কোন এক অনুভূতিশূন্য প্রমত্তা ও বেপরোয়া উৎসব । অলঙ্কারশোভিত সুন্দরীদের অহমিকা, ঈর্ষাকাতরতা আর ধাতব হাসিতে ছড়িয়ে যায় যৌনতার মৌতাত । নেচে নেচে তারা সেই রাতের উৎসবকে স্মরনীয় করে রাখে । অনেকে বিষাদোতীত ভুলতে নেচে যায় । বারটেন্ডারের সার্ভ করা গোলাপি শ্যাম্পেন, ওয়াইন নৃত্যচ্ছন্দে যোগ করে ভিন্ন কোন তাল, লয় চিত্র ও ভাষা । যা এক সময় স্বপ্নীল, স্বর্গীয় বলে মনে হয়েছিল তা মুহুর্তেই ভৌতিক হররে পরিনত হয় । ডন হেনলি এখানে খুবই নাটকীয় ভাবে গানের গল্পের গতিপথে পরিবর্তনটা ফুটিয়ে তুলেছেন ।
অনেকের মতে হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া বলতে যে হোটেলকে বোঝানো হয়েছে সেটা আগে ছিলো একটা গীর্জা যেখানে স্যাটানিস্টরা উপাসনা করতো। স্যাটানিক বাইবেল লেখা হয় গানে উল্লেখিত ১৯৬৯ সালে। এই লিরেক্সে “Kill the beast” এবং “that spirit here”- এই দুইটা লাইন দিয়ে ব্লাক ম্যাজিকের প্রতি ইন্ডিকেট করা হয়েছে । ‘wine’ আর ‘spirit’ এখানে জেসাসের প্রতি নির্দেশ করে। এখানে মার্সিডিঞ্জ বেনযের পরিবর্তে উচ্চারিত ‘বেনড’শব্দটির অর্থ মানসিক ও শারীরিক অস্বস্তি, ‘টুইস্টেড’ বোধ।
আর গানটির এলবামের কভারের ভেতরের অংশে বিল্ডিং এর উপরের তলায় একটা ফিগার দেখা গিয়েছে, অনেকে বলছেন এটা এন্টন লেভীকে দেখা গিয়েছে যিনি প্রথম স্যাটানিক গীর্জা (হোটেল ক্যলিফোর্নিয়া) তৈরী করেছেন এবং তিনি হলিউডের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি এর সাথে জড়িত ছিলেন । অ্যালবাম কভারের আর্ট ডিরেক্টর John Kosh ব্যালকনিতে একটা রহস্যজনক ফিগারের উপস্তিতি নিয়ে বলেন “হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া গানটাকে ক্যালিফোর্নিয়ার বোহেমিয়ান গ্রুভ নামের সিক্রেট স্যাটানিস্ট সোসাইটির মাইন্ড কন্ট্রোল প্রোগ্রামের অংশ বলা যেতে পারে।”
লেড জেপলিনের স্টিয়ারওয়ে টু হ্যাভেন-এর মতো হোটলে ক্যালিফোর্নিয়ার কিছু অংশ ব্যাকমাস্কিং করা। এর মাধ্যমে কিছু সাটানিক ম্যাসেজ ইন্সার্ট করা হয়েছে। এ ধরণের মেসেজ আনকনসাস বিজ্ঞাপনের মনব মনকে ইমপ্যাক্ট করে। সেক্ষেত্রে গানটাকে কোনো একটা রিচুয়ালে চলতে থাকা ঘটনাবলীর বিবরণ বলা যেতে পারে । আঁধারে থাকা ভ্রমনকারী “light bearer” লুসিফারের “shimmering light” দেখতে পায় আর সাটানিষ্ট কিংবা ইলুমিনিটিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত রিচুয়ালের অদ্ভুত গন্ধ তাকে আকর্ষন করে।
হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া এখানে রিচুয়াল অনুষ্ঠানের বলরুম। “voices down that corridor” ভ্রমণকারীকে প্রলুব্ধ করে তাদের সিষ্টেমের প্রতি। “tiffany-twisted” “pretty boys” এই শব্দগুলো সেক্ষেত্রে রিচুয়ালে চলতে থাকা সডোম ও পেডোফিলিয়ার প্রতি ইংগিত দেয়। লুসিফারের “master’s chambers’ এ অনুষ্টিত হয় “feast of the beast”। “nightman” এই অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। প্রতিটা সদস্য আজীবন সদস্য হিসাবে শপথাবদ্ধ । জাঁকজমকপূর্ণ এই অনুষ্ঠানে রয়েছে সমস্ত ভোগের উপাদান । তবে বিসংবাদী আর পলায়নপরদের এখানে অকাল্ট সেক্রিফাইস করা হয় । সেখান থেকে প্রত্যাবর্তনের কোন সুযোগ থাকে না।
তবে গানটার প্রকৃত সৌন্দর্য এখানেই যে, একই সমান্তরালে থাকা সব ইন্টারপ্রিটশনই গ্রহণযোগ্য ।
এই আর্টিকেলের তথ্যগুলো ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
কোন মন্তব্য নেই