শীতার্ত কবিতাগুচ্ছ - ময়ুখ চৌধুরী
![]() |
শীতগল্প
খুব বেশি কিছু নয়,
একটি উড়ন্ত পাতা সামান্য আশ্রয় চেয়েছিল
এই শীতে বাঘের
নিশীথে;
স্বঘোষিত পুরোনো
সেবক, ঐ দ্যাখো,
তোমার আশ্বাসে ভর
করে
বিক্ষত পাখির ডানা
উড়ে আসছে বিছানাবালিশ
সারাদিন দানাপানিহীন
একটি শীতার্ত দেহ
যথার্থ ঘুমের
স্বপ্নে নুয়ে পড়া, ভারি দুটি চোখ
কতো দূর থেকে এলো
কপট বাক্যের মমতায়
নাওয়া নেই খাওয়া নেই
মধ্যরাতে শীতের করাত
এমন বিপন্ন সত্তা,
তার মুখে খাদ্য নয় গান পুঁতে দিলে
রাজার বাড়ির গান
ছটফটে রাতের ক্ষুধায়
কোথাও অনেক দূরে গরম
ভাতের ধোঁয়া কুয়াশায় মেশে
কোথায় গরম ভাত,
কোথায় লেপতোশক রাজার বাড়িতে যায় উড়ে
পড়ে থাকে ফুটপাথে
রাতের ক্ষুধায়
নিহিত বিশ্বাসটুকু
কুয়াশার কাফনে জড়ানো
এই তো শীতের গল্প,
ঋতুচক্র, দেনা আর দায়
আহত পাখির মতো
ইতিহাস অন্ধকারে যায়
শীতার্ত পঙক্তিমালা
১
শীত এসে গেছে।
খড়কুটো জড়ো করে
আগুনকে ডেকে বললাম
আগুনের কাছে গেলে
আরো বেশী শীত করে কেন?
২
রেলগাড়ি চলে গেছে।
ইস্টিশনে ধ্রুবতারা জ্বলে,-
টিনের চাদর, নিচে
কুয়াশায় কেটে গেছে দুই যুগ শীত;
শেষের কবিতা শেষে
আরও কাছে এসেছে অমিত।
৩
শীত এসে গেছে। এই
শীত একজনে ঠেকাতে পারবে না।
এ কথার কী কী অর্থ
হয়?
এর উত্তর জানে শুধু
ইতালির মেয়ে সিনোরিতা,
যাবার আগেই তাই
ঝরেছিল অতিরিক্ত দুচারটি পাতা।
৪
কে কাকে বলেছে এই
কথা-
এইবার খুব বেশী শীত
পড়তে পারে
কেননা, আগের মতো থাকবো
না কাছে।
৬
এসব প্রশ্নের ছায়া
রয়ে গেছে, শরীর কোথায়?
শরীর বরফে গেছে, বরফ
গিয়েছে আজ আগুনের কাছে,
এখানে উদ্বৃত্ত কিছু
ছাই পড়ে আছে।
ঋতুচক্রান্ত
মেরুদেশে দেখা হয় না
শাদা বরফের সঙ্গে কাল বরফের
রূপালি রোদের সঙ্গে সোনালি জোৎস্নার।
-আগে দেখা হতো।
ভূগোলের নিয়মমাফিক
মানুষেরা কাঁটাতার দিয়ে
আকাশের নীল ছাতা আলাদা করেছে।
আজ
আলাদা ছাতার নিচে
দূরে দূরে
জ্যোৎস্না আর রোদ,
অথচ
আলাদা আলাদা দুটো মুঠোর ভিতর
একটাই শীত।
শীতগাছ
আবার এসেছে শীত। কুয়াশা জমাট বাঁধে শীতগাছে,
বোঁটা ছিঁড়ে ফোঁটা ফোঁটা ঝরে শীত জলের আকারে।
অন্ধকারে কেঁপে ওঠে পাতার বুকের তলে বউপাতা,
ক্রমান্বয়ে পাতাগুলো সিঁড়ি হয়ে নামে; আগুনের খোঁজে।
চরণেরা নেমে আসে টুপটাপ টুপ,
ভৌতিক লণ্ঠন জ্বল্ব জেগে থাকা ঘড়-বাড়ি চুপ-
সেখানে রচিত হয় হৃতকম্প ব্যতিরেকে শীতার্ত কবিতা।
প্রকৃত বিধানমতে সেও চলে যাবে।
তবুও কোথাও যেন একদিন শীত এসেছিল,
শরণার্থী হতে চেয়েছিল
একটি শালের নিচে,
দুটি শীতগাছ তার সবগুলো ডালপালা মেলে
অক্টোপাস হতে চেয়েছিল।
শীতকাল আজও আসে, যথারীতি যায়;
তার কার্যকলাপের তেমন ব্যত্যয় কিছু নেই,
তবু বারবার শীত কিছু একটা ফেলে রেখে আসে
অন্ধকার ও শীতের পরিপ্রেক্ষিতে
অন্ধকার নামছে
কালো একটা কোটের মতো
শীতের শরীরে।
শীত নামছে
তোমার আবৃত বুকের
ধবধবে খোঁপার মতো
পাহাড়ের চূড়ায়।
অতঃপর
অন্ধকার ও শীত নামছে
প্রকাণ্ড এক ভালুকের মতো
একটি ঘরে,
যেখানে তুমি আর আমি।
এসো,
আমরা বিষুবরেখা খুঁজি।
ছবি: সনি
সংকলন: হুইসেল সাহিত্যপত্র
কোন মন্তব্য নেই