Header Ads

Header ADS

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ময়ুখ চৌধুরীর লেখা তিনটি কবিতা


কাটা পাহাড়


সাঁতার কাটবে বলে কোনো এক স্বরচিত নদী
পায়ে পায়ে একদিন পাহাড়ের কাছে এসেছিল।
পাহাড় দো-ফাঁক হয়ে রাস্তা করে দিয়েছিল তাকে।
হঠাৎ কী জানি হলো
নদীটা গুটিয়ে গেল শামুকের কঠিন খোলসে।
কাটা পাগাড়ের মাংস
কে দেবে সেলাই করে শুনি!

৪.৩.১২

(চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটা পাহাড় নামে একটি সড়ক আছে। এই কবিতাটি সে সড়ককে নিয়ে লেখা। সড়কটি পাহাড় কেটে বানানো হয়েছিল)


জিরো পয়েন্ট টু ইনফিনিটি


ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে আসে
নীল তিমিমাছ ট্রেনের মতো,
যায় চলে যায় জারুলতলায়
গুনগুনিয়ে দেবব্রত।

ইস্টিসনের অল্প দূরে অন্যরকম তরী
জারুলতলায় তরুণ ছায়ায় থমকে গেছে ঘড়ি ।

হঠাৎ দেখা চন্দ্রলেখা
আসছে ছুটে সি-এন-জিতে
কী যেন কী নেয় নি ফেরত
খুঁজছে এখন বিশ্বজিতে ।

সঙ্গে তাহার সবুজ পাহাড়, নীলাম্বরী নীল যমুনা
জারুল তলায় একটি পাহাড় জল ফড়িঙের স্তব্ধ ডানা ।

নীলাম্বরী পাখির বাসা উড়াল প্রবণ সর্বনাশা
বাসার ভিতর ডিম
ডিমের ভিতর হলুদ চাঁদের লজ্জামাখা হিম ।

আজ দুপুরে প্রস্ফুটিত নরম রোদের আলো
আজ দুপুরে জারুল তলায় মাছেরা সাঁতরালো ।
কেউ হয়েছে মৎসকুমার, কেউ-বা জলের কন্যা
অন্যরকম নদীর ঢেউয়ে বন্য রকম বন্যা

দুপুর বেলার একটু পরে
জারুল ফুলের বৃষ্টি ঝরে
উষ্ণ চায়ের কাঁপে
টলমল মুখটা ভাসে
একজোড়া ঠোঁট নেমে আসে
আলতো চুমুর মাপে

হঠাৎ কালের ঘণ্টি বেজে উঠলো কেঁপে ঘড়ি
ছায়ার নিচে দাঁড়িয়ে আছে অন্যরকম তরী
ভালবাসার টিকেট কেটে যাচ্ছে অনেক দূর
যায় রেখে যায় জারুল তলায় চিরন্তনের সুর
জীবন তরী খাচ্ছে গিলে পাতাল তরীর দৈত্য
জারুলতলার দ্বৈত ছায়া চিরকালের সত্য ।


(জিরো পয়েন্ট, জারুলতলা, এগুলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি স্থানের নাম। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনকে নীল তিমিমাছ বলা হয়েছে। এখানকার ছোট ছোট বাসগুলোকে তরী নামে ডাকা হতো)

ঝর্ণার দেখা


কখনো দেখিনি আমি কেবল শুনেছি তার নাম
এতো কাছে তবু কতো দূরে!
দু'পাহাড় দূরে তার বাড়ি,
একদিন দুইদিন বহুদিন ধরে
সবুজ পাহাড় দুই হাঁটু ভাঁজ করে
লুকিয়ে রেখেছে তাকে মাঝখানে চোখের আড়ালে।

বিপদজনক খাদ, প্রবাহিত তরল আবেগ
শিরাউপশিরা বেয়ে কে যায় কে যায়
জীবনের দুপুরবেলায়?

ঝর্ণাসুতো দিয়ে নাকি সে তার দেহের ছবি আঁকে
কার খোঁজে অবিরাম এই ছুটোছুটি, খোঁজে কাকে?
তাকে দেখে পথঘাট থেমে যায়, তরুলতা ঝিম মেরে থাকে,
অহংকারী হরিণের শিং
সহজে আনত হয় উচ্ছলিত জলের ফেনায়।

জীবনের দুপুরবেলায়
আবার পিপাসা লাগে, নরম নগ্নতা থরথর
ছোঁয়া লেগে কেঁপে ওঠে প্রবীণ পাথর;
নতচক্ষু হয়ে আজ দেখি–
এতো জল এতো ঢেউ অনায়াসে ডুবে যেতে পারি,
ডুবে যেতে পারে ঘরবাড়ি।

সে-কোন শৈশবে ছিলে পাললিক পাথরের তলে
চোখের আড়ালে ঝর্ণা, কবে তুমি এত বড় হলে!

০৯.০৪.১১

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের পেছনে একটি ঝর্ণা আছে। দীর্ঘ কয়েক দশক এই অনুষদের শিক্ষক থাকলেও ময়ুখ চৌধুরীর ঝর্ণাটি দেখা হয়নি প্রথমে। পরে তিনি ১১ সালে একদিন এটি দেখতে যান এবং বিস্মিত হন। ফিরে এসে কবিতাটি লেখেন তিনি। এটিকে অবশ্য নিছক প্রাকৃতিক ঝর্ণার কবিতা হিসেবে না নিয়ে ঝর্ণা নামের কোনো মেয়ে, কিংবা অন্য অর্থেও পাঠ করা যায়। কবিতার নামটি তাঁর স্ত্রী কবি তাসলিমা শিরীণের দেয়া।

কোন মন্তব্য নেই

enjoynz থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.