Header Ads

Header ADS

রোকেয়া হল, মেঘ, পাহাড় ও আপন মাহমুদের মৃত্যু




টু রোকেয়া হল


আমাদের প্রায় সবারই কিছু না কিছু গল্প আছে- আছে শৈশব মোমে জ্বলা
দু-একটি সিঁদুরে মুখ- দূরে, কাশবনের ভেতর থেকে বারবার বেরিয়ে আসা
ছেলেগুলো আমাদের বন্ধু- ভালোবাসার জন্য একদিন আমরা পকেটের গোপন
আধুলিটাও ভিক্ষুকের থালায় রেখেছি- অথচ, সায়মারা দেশছাড়া- শিরিনেরা
ঘোলাজলে দ্যাখে মুখ- আর লোপাদের মুখে কেবল সন্তানের দুষ্টুমি!


আমাদের কোনো কোনো বন্ধু স্বর্গে যাবে বলে মদের টেবিলেও মগজে টুপি
রাখতো- প্রায়ই আমরা বালিকাময় বিকেল ঘুরতে যেতাম- মাঠের মাঝখানে
বসে দেখতাম দূর্বাঘাসের চে অধিক নরম স্বপ্ন- অথচ, প্রিয় বন্ধুটির
কবরে মাটি না দিতে পারার আক্ষেপটুকুও আজ আমাদের কার নেই!


ঈশ্বর যেখানে আছে থাকুক, ওপথ আমার সরু মনে হয়- আমাদের চিয়ার্সের
শব্দ থেকেই শুরু হবে অনাগত গানের প্রবাহ- এই ভেবে এখনো আমরা
পানশালায় যায়, যদিও পুলিশ দেখলেই আজকাল মদের নেশা কেটে যায়!


আমাদের রয়েছে লিখতে না-পারার মতো দুর্যোগ আর ভালোবাসতে না-পারার
মতো অনটন- বন্ধুরা, আবহাওয়া ষোলই আগস্ট থেকেই খারাপ- সমুদ্রে লঘুচাপ
নৌকা ভীড়ে আছে উপকূলে- ঊনুনে শূন্যহাঁড়ি- জানি, বুকের আগুনে একটা ডিমও
সেদ্ধ হয় না- তবু, স্বর্গ যদি থাকে, তোমরা যাও- আমি রোকেয়া হলের দিকেই...



১৯৭৬ সালে জন্ম আপন মাহমুদের। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে ২০১২ সালে মারা যান তিনি। মৃত্যুর এক বছর আগে, ১১ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর একমাত্র কবিতাগ্রন্থ "সকালের দাঁড়ি কমা"। এ যেন আরেক আবুল হাসান এসেছিলেন বাংলা কবিতায়। আসুন তাঁর আরো কিছু কবিতা পাঠ করি।



কথা, পাহাড়ের সঙ্গে

পাহাড়, তোমাকে কিছু বলতে ইচ্ছে করে__ বিশেষত মনমরা বিকেলে
কী করো তুমি__ কার কথা ভাবো__ কে তোমার কান্নাকে প্রথম ঝরণা
বলেছিলো? আমি? আমি দু-চারটা সিগারেট বেশি খাই, চুপচাপ
ঘুরি-ফিরি__দাড়ি কেন কাটতে হবে, ভাবি...

মাঝেমাঝে নিজেকে শৈশবের হাতে তুলে দিয়ে ঘড়ি দেখি__ঘড়িতে
৩৪টা বাজে! ফুল পাখি নদী ওরা কেমন আছে?

পাহাড় তুমি কি জানো, রজনীগন্ধা সবজি নয় কেন!



ও মেঘ, বউয়ের মতো মেঘ

ও মেঘ, বউয়ের মতো মেঘ; আমাকে প্রেমিকার
মতো ভেজাও--দ্যাখো, চিন্তার সোনালি আঁশ শুকিয়ে
যাচ্ছে। আমি তেমন প্রার্থনা জানি না-- বড়জোর
ছেলেব্যাঙ-মেয়েব্যাঙয়ে বিয়ে দিতে পারি--থু লেপে
ভিজিয়ে দিতে পারি নিজের শুকনো ঠোঁট

মেঘ, তুমিও কি অপচয়ের ভয়ে আর আগের মতো
ঝরো না--জলখরচের ভয়ে আমি যেমন কান্নাকে
... দূরে রাখি--থাক অতো হিসাব-নিকাশ--দ্যাখো,
চালতাফুল তাকিয়ে আছে অবিবাহিত খালাতো
বোনের মতো! যদি ভেজাও তুমি--হবো শাপলায়
ভরে যাওয়া মাঠ

শুনো; গল্পের উঠান কি একাই ভিজবে আমাদের
সর্দি-কাশির অজুহাতে! এসো, ছাতাহীন হাঁটুরের মতো
ভিজি--আরো কাছে গিয়ে দেখি আষাঢ়ের ভেজা বউদি

ও মেঘ, বউয়ের মতো মেঘ; আমাকে সাহারার হাত
থেকে বাঁচাও।

আপন মাহমুদের বই



দৌড়

যেটুকু পথ পেরোতে বন্ধুদের তিন মিনিট লাগতো- তা অতিক্রম করতেই আমার লাগতো কমপক্ষে ত্রিশ মিনিট-এভাবেই একদিন আমি খুব পেছনে পড়ে গিয়েছিলাম- পেছনে তাকালে আমাকে দেখতে পেতো না কেউ- পেছনে কেবল ঝরাপাতার ওড়াউড়ি, ফেল করা বালকের মুখচ্ছবি...
ইজিপশিয়ান সেই কচ্ছপের মতো এখন আমি তোমার কাছে পৌঁছে গেছি! কেউ নেই চারপাশে- চলো, আকাশের দিকে তাকিয়ে আমরা নতুন করে নিজেদের উচ্চতা মাপি- আর সবচে দ্রুতগতিসম্পন্ন বন্ধুটিকে প্রশ্ন করি, 'তোমার খোঁড়া বন্ধুটি কেমন আছে'
দৌড় ভালোবেসে যারা আজন্ম হতে চেয়েছিলো প্রথম- দ্যাখো, তাদের কেউ কেউ এখনো নিজেদের কাছেই পৌঁছাতে পারেনি! অথচ, বকুলপাড়ার পঙ্গু ছেলেটিই একগুচ্ছ ঘাসফুল নিয়ে এসে নিজেকে জয়ী ঘোষণা করলো!


আপন মাহমুদের মৃত্যু নিয়ে কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ এই কবিতাটি লেখেন:

আপন মাহমুদের মৃত্যু

আপন মাহমুদ ঐ অর্থে আমার আপন কেউ ছিলো না।
তার সাথে আমার ৪/৫ বার দেখা হয়েছে।
তারপর সে মারা গেছে।
আপন ভালো কবিতা লিখতো।
তার মৃত্যুর পর কবিমহলে খুব শোরগোল হয়।
আমার প্রথম মন খারাপ হয়েছিলো। পরে সব ঠিক হয়ে গেছে।
আমি ঐদিন খুব ভালোভাবে অফিস করেছি। টেলিভিশনে ফুটবল খেলা দেখেছি।
রাতের সংবাদের সময় এক মন্ত্রীকে নিয়ে খুব হাসাহাসি করছিলাম।
তখন আপন মাহমুদ বললো, ইমতিয়াজ, আমি মারা গেছি আর আপনি হাসতেছেন!
আমি হাসি বন্ধ করলাম। আমি হাসি বন্ধ করে ঘুমাতে গেলাম।
আপন বললো, কবরের ভেতর খুব গরম।
ইমতিয়াজ এখানে কোন বাতাস নাই। ঘুম আসে না।
আমি বুঝতে পারলাম এক বন্ধুর মৃত্যুতে আমি সামান্য ঘোরগ্রস্থ হয়েছি।
আপন বললো, পরশু আপনার একটা কবিতা
আমার ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করে এসেছিলাম। দেখেছেন?
আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন ভোরে তাকে নিয়ে একটা গদ্য লিখতে বসলাম।
আমি মারা গেছি আর আপনি আমার মৃত্যু নিয়াও ব্যবসা শুরু করছেন!’
আমি আপন মাহমুদকে সাথে নিয়ে অফিস করলাম।
আপন বললো, কবরে এত নিঃসঙ্গ লাগে। এমন নিঃসঙ্গ!
সন্ধ্যায় তরুণ কবিকে নিয়ে একটা স্মরণ সভা ছিলো।
আমি যাবার জন্য রওয়ানা হয়েছিলাম।
আমাকে আটকে দিলো!
সবাই যখন শোক করছে। স্মৃতিচারণ করছে। অনেক অনেক সভা করছে।
আমি তখন আপন মাহমুদের কবরটা কাঁধে নিয়ে এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছি।

সংকলন: হুইসেল


কোন মন্তব্য নেই

enjoynz থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.