Header Ads

Header ADS

হিমু এবং কয়েকজন গ্রিক দেবী - ত্বরিকুল ইসলাম । গল্প



০১.
হিমু খালি পায়ে হলুদ পাঞ্জাবী পরে শীতলক্ষা নদীর তীরে হাঁটছিলো। সামনে একটা বটগাছ। কাছে আসতেই বটগাছটা নড়েচড়ে উঠলো। হিমু নির্বিকার ভঙ্গিতে বললো: স্বাগতম দেবরাজ জিউস।
জিউস একটু হতচকিত হলেও নিজেকে সামলে নিলেন। পুঁচকে একটা ছেলের কথায় হতচকিত হওয়া দেবরাজের শোভা পায় না। তিনি একটি স্বর্ণের আপেল হিমুর হাতে তুলে দিলেন। আপেলটির গায়ে লেখা- "স্বর্গ-মর্ত্যের সবচেয়ে সুন্দরী নারীর জন্য এই আপেল"।
জিউস বললেন,
--এই আপেলটা নিয়ে হেরা, এথেনা ও এফ্রোদিতি'র মাঝে তুমুল ঝগড়া চলছে। আমি চাই, তুমি মিমাংসা করে দাও কে ওদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর।
--আমি কেন?
--কাণ তুমি এই পৃথিবীর সবচেয়ে নির্বোধ ব্যক্তি। দেবীরা আপেলটি পাওয়ার জন্য নানারকম ঘুষ দিতে চাইবে। আমি জানি, তুমি এসবের কিছুই নেবে না। একে আমি নির্লোভ না বলে নির্বোধ-ই বলবো।
--বাবা আমাকে নির্বোধ বানাতে সারাজীবন চেষ্টা করেছেন। এজন্য আমার মাকে পর্যন্ত তিনি হত্যা করেছিলেন।
--তোমার বাবা ছিলেন বড়সড় রকম নির্বোধ। বলা যায় রাম নির্বোধ। রাম নির্বোধ না হলে ছেলেকে নির্বোধ বানাতে নিজের স্ত্রী-কে কেউ হত্যা করে না।
--আমার মায়ের মৃত্যুতে আমি একটুও কাঁদিনি। তা দেখে খুশিতে বাবার চোখে পানি চলে এসেছিলো। আজ আপনি আমাকে নির্বোধের যে স্‌বীকৃতি দিলেন। এটা দেখে বাবা নিশ্চয় নরকে বসে ইতোমধ্যে একহাটু চোখের পানি বিসর্জন করে ফেলছেন। আপনার নরকের সব আগুন সেই পানিতে নিভে গেছে!
জিউস একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
--সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হল নির্বোধদের জন্য নরকে কোনো আলাদা প্রকোষ্ঠ নেই। তাদেরকে স্বর্গে থাকতে হয়!
০২.
স্বর্ণের আপেলটি টেবিলের ঠিক মাঝখানে। হিমু টেবিলের ওপর মুখ রেখে জিহ্বা বের করে আপেলটির দিকে তাকিয়ে আছে।
আপেলটি স্টিভ জবসের 'এপল'-এর মত একপাশে কামড়ের দাগ। গাছের সেলুলোজিক আপেল হিমু অনেক খেয়েছে, কিন্তু স্বর্ণের আপেল খেয়ে দেখা হয় নি। তাই একটু আগে হিমু আপেলটি কামড়ে খেতে চেষ্টা করেছে। তিতা লাগায় 'ওয়াক থু' বলে ফেলে দিয়েছে। এই তেতো স্বর্ণের জন্য মানুষে মানুষে কত যুদ্ধ! কত রক্তপাত!!
--আমি দেবী সম্রাজ্ঞী হেরা
--বলো... (হিমু আপেল থেকে চোখ না সরিয়েই বললো)
--তুমি আপেলটি আমাকে দাও। পৃথীবির যাবতীয় সম্পদ আমার অধীনে। আমি তোমাকে অসীম ধন-সম্পদ দেবো।
--আর যদি আপেলটি তোমাকে না দেই?
--তাহলে তোমার সকল অর্থ সম্পদ আমি কেড়ে নেবো।
--কেড়ে নেওয়ার মত কোনো সম্পদ আমার নেই। তুমি চলে যাও।
দেবী হেরা ব্যর্থ হয়ে খালি হাতে ফিরে গেলো।
০৩.
--আমি দেবী এথেনা, আপেলটি আমাকে দাও।
--দিলে আমি কি পাবো?
--আমি জ্ঞানের দেবী। আপেলটি দিলে আমি তোমাকে বিদ্যা-বুদ্ধিতে পৃথীবিতে অদ্বিতীয় করে দেবো।
--যদি না দেই?
--তাহলে তোমার সকল বিদ্যা-বুদ্ধি কেড়ে নেবো।
--বিদ্যা-বুদ্ধি দিয়ে আমি কি করবো। আমার সারাজীবনের সাধনা একজন খাঁটি নির্বোধ হওয়ার। আমাকে কেউ নির্বোধ বললে আমার রাম-নির্বোধ বাবা স্বর্গে বসে খুশিতে কেঁদে ফেলেন। তার অশ্রুতে স্বর্গের ফ্লোর ভিজে জবজব করে। আমি নির্বোধ-ই থাকতে চাই। তোমাকে আমার প্রয়োজন নেই। তুমি যাও।
এথেনা হতাশ হয়ে চলে গেলো।
০৪.
হিমু এখনো জিহ্বা বের করে আপেলের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। ঘরে প্রেমের দেবী এফ্রোদিতি প্রবেশ করলো। সাথে সাথে ঘরময় গোলাপের সুঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়লো।
--আপেলটি আমাকে দাও। আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটি তোমাকে দেবো।
হিমু মুচকি হাসলো।
--পৃথীবির সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটি আমার আছে। আমার রূপা, আমার নীল পাখি।
--যদি আপেলটি আমাকে না দাও তাহলে রূপাকে তুমি কোনদিন পাবে না। আমি তোমাদের মিলন হতে দেবো না।
--আমি চাই রূপার সাথে আমার মিলন না হোক।
এফ্রোদিতি অবাক হয়ে হিমুর দিকে তাকালো..
--তুমি রুপাকে ভালোবাসো, অথচ রূপাকে কাছে পেতে চাও না!
--না, চাই না। কারন আমি তাকে ভালোবাসি। এবং ভালোবাসা ছাড়া আমি তাকে আর কিছুই দিতে পারবো না। আমি তার যোগ্য না।
--কিন্তু..
--ভালোবাসা মিলনে মলিন হয়, বিরহে অমর।
এফ্রোদিতি চেয়ে দেখলো, হিমুর চোখে জল। জীবনে এই প্রথম হিমু কাঁদছে...
এফ্রোদিতি কিছু না বলে নিরবে চলে গেলো।
স্বর্গে বসে হিমুর রাম-নির্বোধ পিতা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তার মিশন অবশেষে ব্যর্থ হয়েছে। তার ছেলে প্রেমে পড়েছে।
০৫.
শীতলক্ষা নদীতে হিমু আপেলটা ছুঁড়ে ফেলে দিলো। আশেপাশের কারখানাগুলো থেকে ছড়ছড় করে বের হয়ে আসা টেক্সটাইলের বর্জ্যে আপেলটি গলে মিশে যাক।
একমাত্র টেক্সটাইলের বর্জ্য স্বর্ণের আপেলকেও গলিয়ে নিঃশেষ করে দিতে পারে!

গল্পকার: ত্বরিকুল ইসলাম, 
প্রভাষক, বেগমগঞ্জ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার কলেজ।

কোন মন্তব্য নেই

enjoynz থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.