বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৯

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা আল মাহমুদের দুষ্প্রাপ্য কবিতা ‘নিশিডাক’


বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আল মাহমুদ একটি কবিতা লিখেছিলেন। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, তাঁর কোনো কাব্যগ্রন্থে, কবিতাসমগ্রে কিংবা রচনাসমগ্রতেও কবিতাটি নেই! সম্প্রতি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল ও নুরুল হক কবিতাটি সংগ্রহ করেছেন। আসুন, ঐতিহাসিক কবিতাটি আগে পাঠ করে নিই।

নিশিডাক

আল মাহমুদ


তার আহবান ছিলো নিশিডাকের শিসতোলা তীব্র বাঁশীর মত।

প্রতিটি মানুষের রক্তবাহী শিরায় কাঁপন তা বাজত
নদীগুলো হিসহিস শব্দে অতিকায় সাপের মত ফণা তুলে দাঁড়াতো
অরণ্যের পাখিরা ডাকাডাকি করে পথ ভুলে উড়ে যেত সমুদ্রের দিকে।

সে যখন বলল, ‘ভাইসব।’
অমনি অরণ্যের এলোমেলো গাছেরাও সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে গেল
সে যখন ডাকলো,‘ভাইয়েরা আমার।’
ভেঙ্গে যাওয়া পাখির ঝাঁক ভীড় করে নেমে এল পৃথিবীর ডাঙায়
কবিরা কলম ও বন্দুকের পার্থক্য ভুলে হাঁটতে লাগলো 
খোলা ময়দানে।

এই আমি 
নগন্য এক মানুষ
দেখি, আমার হাতের তালু ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে
এক আগুণের জিহবা।

বলো, তোমার জন্যই কি আমরা হাতে নিইনি আগুন?
নদীগুলোকে ফণা ধরতে শেখায় নি কি তোমার জন্য–
শুধু তোমার জন্য গাছে গাছে ফুলের বদলে ফুটিয়েছিলাম ফুলকি,
আম গাছে গুচ্ছ গুচ্ছ ফলেছিল
গ্রেনেড ফল। আর সবুজের ভেতর থেকে ফুৎকার দিয়ে
বেরিয়ে এল গন্ধকের ধোঁয়া। আহ্
আমি এখন আর চোখ মেলতে পারছি না।


কবিতাটি বেবী মওদুদ সম্পাদিত ‘বাঙালির শুদ্ধ নাম শেখ মুজিবুর রহমান’ নামক সংকলনে প্রকাশিত হয়েছিল। সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল একদিন কবি আল মাহমুদকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘মাহমুদ ভাই, বঙ্গবন্ধু আপনার জন্য এতো করেছেন অথচ আপনি তাঁকে নিয়ে একটি কবিতাও লিখেন নি’!
জবাবে কবি বলেছিলেন,  ‘কি বলো মিয়া, তোমরা আমার বই মন দিয়ে পড়ো না। তাঁকে অর্থাৎ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ নিয়ে লেখা ‘নিশিডাক’ নামে আমার অসাধারণ কবিতা আছে। যা গুণের ১০০ কবিতার চেয়েও ভারী’।
বেবী মওদুদ সম্পাদিত বইটি থেকে। ছবি সৌজন্য: নূরুল হক


নির্মলেন্দু গুণের প্রসঙ্গ এসেছে, কারণ তার লেখা ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’ বেশ বিখ্যাত কবিতা। আল মাহমুদের কবিতার মূল ব্যাপার এই যে, এটি শিল্পমানসম্মত একটি কবিতা হয়ে উঠেছে, স্লোগান বা নিছক বর্ণনায় পরিণত হয়নি। আল মাহমুদ একাত্তরে কলকাতায় ছিলেন, আরো অনেক কবি-লেখক-বুদ্ধিজীবীর মতো সেখান থেকে প্রচারণা চালিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। সেসব চিত্রই উঠে আসে ‘কবিরা কলম ও বন্দুকের পার্থক্য ভুলে হাঁটতে লাগলো/খোলা ময়দানে।’ পঙক্তিগুলোয়। পুরো কবিতাই মূলত ৭ই মার্চের আহ্বান শুনে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার উপাখ্যান।

একবারও বঙ্গবন্ধু, শেখ মুজিব কিংবা ৭ই মার্চ শব্দগুলো উচ্চারণ না করেই, আল মাহমুদ যে কবিতাটি লিখে ফেললেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এরচেয়ে শিল্পসম্মত কবিতা আর আছে কি?

(কবিতাটি উদ্ধারে যারা পরিশ্রম করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।)
দেওয়ান তাহমিদ
সদস্য, হুইসেল সম্পাদনা পর্ষদ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন