বৃহস্পতিবার, ৮ আগস্ট, ২০১৯

কাশ্মীর নিয়ে তিনটি কবিতা


উপমহাদেশ, কাশ্মীর, ৯৩

আল মাহমুদ

মানবিক বৃত্তির যা কিছু প্রাপনীয় ,কিনে নিতে হবে রক্তের দামে।
যেমন কিনে নেয় মানুষের গুলিবিদ্ধ বুক সন্তানের স্বাধীনতা, গ্রামগুলোর সম্ভ্রম।
ভূস্বর্গে আগুন জ্বলছে। আর আমাকে কে যেন চোখ বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে
                                   বদ্ধভূমির দিকে -
তবুও কি অদম্য মানুষের স্বাধীনতার গান।
স্বাধীনতা, শব্দটি পারতপক্ষে এখন আর উচ্চার্য নয়।
স্বাধীনতা, এক উপত্যকাবাসীর ফিনকি দেওয়া রক্তের চিৎকার। লেকের ভেতর
প্রতিটি নৌকোয় এখন গুঞ্জরিত হচ্ছে কাশ্মীর। মনে হয় প্রতিটি বিষণ্ন মুখই
উদ্গীরণ করতে পারে বুলেট।
প্রতিটি যুবতীরর বক্ষসুষমায় লুকিয়ে আছে বিস্ফোরক।
প্রতিটি কিশোরীর ইজ্জতের ওপর এখন রোপিত আছে স্বাধীনতার পতাকা।
অত্যাচারীর প্রতিটি রোমকূপ এখন আজাদীর রক্তে সিক্ত। স্বাধীনতা এখন
হাত বাড়িয়ে দেওয়া ইতিহাস কিংবা
ইতিহাস এখন অপেক্ষমাণ কাশ্মীর।

আমেরিকা তোমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে এক কবি।
উপমহাদেশের জর্জরিত মানবাত্মার সর্বশেষ বিশ্বাসের স্তম্ভ।
আমেরিকা তোমার একটিই প্রশ্ন: ইসলামের কি এখন আর বিক্রি করার আছে?
আমরা বিনিময় করি বিশ্বাস। আমাদের কাছে ঈমান। আমেরিকা
              তুমি কি জানো ঈমান কি?
ডলারের স্তুপ
তোমার কৃৎকৌশল
তোমার একচেটিয়াবাজি থেকে হাত ফসকে বেরিয়ে যাওয়া
              নিউক্লিয়ার ওয়েপন।
আর তোমার হাতের পাঁচ জাতিসংঘের সিন্দুকে যা নেই।
আমাদের লেনদেন সেই বিশ্বাসের।
বিশ্বাস, যা নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে জাতিগুলোর স্বাধীনতার দীর্ঘশ্বাস, কাশ্মীর।


তোমরা ও নরসীমা রাও
ও লালকৃষ্ণ আদবানী, ও শ্রীবাল ঠাকরে
তোমরা কি জান না মানুষের জন্ম হয় নারীর জঠরে?
কাশ্মীরের ধর্ষিতা যুবতীরা জানে কোনও নারীর গর্ভ তোমাদের জন্ম দেয়নি।
তোমরা আগুনের সন্তান। ইবলিসের ঔরস থেকে ছিটকে পড়া স্ফুলিঙ্গ মাত্র।
তোমাদের বাসস্থান হাবিয়া।


আল মাহমুদের কবিতাটি ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত তাঁর ১১তম কবিতাগ্রন্থ আমি, দূরগামী থেকে নেয়া।



শ্রীনগরে দেখা হবে

কবীর সুমন

যেখানেই  থাকো তুমি শ্রীনগরে দেখা হবে
ইতিহাস তুমি বলো স্বাধীনতা দেবে কবে।
ঝিলমের স্রোতে বাসে রাতের কবিতা একা 
আঁধারের কবি জানে শ্রীনেগরে দেখা হবে।

ইনস্যাস থেকে গুলি আকাশে বুলেট ক্ষত
তারারা গুলির দাগ প্রদীপ জ্বলবে যত।
কার ঘরে নিভে গেছে প্রদীপের শিখা কবে
আফজল গুরু শোনো শ্রীনগরে দেখা হবে।

ফাঁসিতে বুলেটে বুটে ইতিহাস ফ্যালে পিষে
সেই ইতিহাসই বাঁচে একা দোয়েলের শিসে।
কাশ্মীরে স্বাধীনতা ডাকছে দোয়েল একা 
গানের কসম জান শ্রীনগরে হবে দেখা।।


এটি মূলত কবীর সুমনের গানের লিরিক। ২০১৬ সালে এটি লিখে  তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের রোষের মুখে পড়েন। তাঁর ফেসবুক আইডি সাময়িকভাবে ব্লক করে দেয়া হয়। এখানে কাশ্মীরের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা আফজাল গুরুর পক্ষে কথা বলা হয়েছে। আফজাল গুরুকে সন্ত্রাসী হামলা পরিকল্পনার অভিযোগে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল। অরুন্ধুতি রায় সহ ভারতীর অনেক বুদ্ধিজীবীই এটির প্রতিবাদ করেছিলেন। 


অনন্ত কাশ্মীর

হাসান রোবায়েত

তোমার কথা শুনেছে এক কবি
কেবল কল্পনাতেই থরথর
বরফ পড়া প্রাচীন উপত্যকা
জোসনা এসে বাজাতো সন্তুরও—


এখন তোমার চিনার বনে পাখি
হারিয়ে যায় আম্মাকে ডাক দিয়ে
রক্তকেকায় ময়ূর সহজিয়া
ঘুমিয়ে পড়ে অজস্র ইন্দ্রিয়ে—

এখন আমি কাঁদতে পারি হুহু
ফিলিস্তিনও ফুটছে লেবুর ডালে
শাদা ঘ্রাণের প্রসঙ্গতা যেন
ফেনোচ্ছলে উড়ছে কত সালে!

আমার সমাজ ফ্যাসিবাদের ভূমি
কেউ ভালো নাই পাহাড়-সমতলও
ইয়েমেনের রুগ্ন শিশু দেখেও
ক্যামনে তুমি ভাতের নলা তোলো

আকাশ ভরা ফসফরাসের বন
অপরাহ্ণে অন্ধ আফিম তীর
আমার মাকেও ডাকতে গিয়ে আমি
ডেকেছি বোন, অনন্ত কাশ্মীর—

কবিতাটি  হাসান রোবায়েত তাঁর ফেসবুক আইডিতে ১০ই আগস্টে পোস্ট করেন।


সংকলন- হুইসেল টিম


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন